Monday, 28 March 2016

বছরের শেষদিকে মূল্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা

চলতি বছরের শেষদিকে ডেইরি পণ্যের বাজারদর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ফন্টেরা। তবে এর আগে পণ্যগুলোর উৎপাদক খামারিদের অব্যাহত দরপতনে সৃষ্ট চাপ সামলাতে হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ এতে খামার থেকে ডেইরি পণ্যের সংগ্রহ মূল্য (ফার্মগেট প্রাইস) ও সমবায় লভ্যাংশ পরিশোধের হার অনেক কমে যাবে। খবর এগ্রিমানি।
নিউজিল্যান্ডভিত্তিক দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতার কারণে বছরের অধিকাংশ সময় পণ্যগুলোর বাজার মন্দা যাবে। বিশেষ করে চীনে পণ্যগুলোর আমদানি চাহিদা কমে আসায় বিশ্বব্যাপী ডেইরি পণ্যের বাজারমূল্যে ব্যাপক অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বছরের শেষদিকে দেশটিতে পণ্যগুলোর আমদানি বৃদ্ধি ও ইউরোপে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে এ মন্দা ও অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
বৈশ্বিক ডেইরি পণ্য রফতানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী থিও স্পিয়ারিংস জানান, ইউরোপের দেশগুলোয় উৎপাদন বৃদ্ধির বিপরীতে শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ চীন ও রাশিয়ায় পণ্যগুলোর আমদানি হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক হারে। ফলে ১৮ মাস ধরে ভারসাম্যহীনতায় রয়েছে পণ্যগুলোর বাজার।
স্পিয়ারিংস আরো জানান, এ ভারসাম্যহীনতারই প্রতিফলন দেখা গেছে ফন্টেরার সর্বশেষ গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড (জিডিটি) নিলামে। এতে পণ্যগুলোর গড় মূল্য নেমে আসে আট মাসে সর্বনিম্নে। ডেইরি পণ্যের এ বাজার নিম্নমুখিতা স্বল্প মেয়াদে বজায় থাকবে আরো কিছুদিন।
চলতি বছরের শেষদিকে বৈশ্বিক ডেইরি পণ্যের বাজার  চাঙ্গা হয়ে ওঠার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের তুলনায় বেশ আত্মবিশ্বাসী স্পিয়ারিংস। এর আগে গত মাসে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক কেরি গ্রুপের প্রধান স্ট্যান ম্যাকার্থি বলেছিলেন, কোনো বিশ্লেষক বা সংশ্লিষ্ট কেউ যদি চলতি বছর পণ্যগুলোর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার পূর্বাভাস দেয়, তাহলে তিনি অবাক হবেন।
বছরের শেষ নাগাদ চীনে পণ্যগুলোর আমদানি বাড়ার কারণেই দাম বাড়বে বলে মনে করছেন স্পিয়ারিংস। তিনি জানান, ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার বাড়ার কারণেই দেশটির ডেইরি পণ্যের আমদানি বাড়বে। এর মধ্যে ৪-৫ শতাংশ বেড়ে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের (ডব্লিউএমপি) বার্ষিক ব্যবহারিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অঞ্চলের উৎপাদনের গতি অনেকাংশেই শ্লথ হয়ে আসবে। গত বছর কোটাপ্রথা প্রত্যাহার করে নেয়ায় আঞ্চলিক জোটটির আওতাভুক্ত দেশগুলো থেকে এ সময়ের মধ্যে শুধু তরল দুধেরই সরবরাহ বেড়েছে ১০০ কোটি লিটারের বেশি।
ফন্টেরার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষে স্বাভাবিক ধারায় ফেরার পর ইইউর বার্ষিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ শতাংশে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইইউ অঞ্চলে ডেইরি পণ্যের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪ শতাংশে। গত বছর এ অঞ্চলের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে উৎপাদনের গতি আরো শ্লথ হয়ে ২০১৭ সালে এ প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে দশমিক ৭ শতাংশে।
ফন্টেরা আরো জানায়, সামনের দিনগুলোয় ডেইরি পণ্যের বাজার প্রভাবকগুলো আরো অনুকূল হয়ে উঠতে পারে। ফলে ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক ডেইরি পণ্যের বাজার বর্তমানের তুলনায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়ে দাঁড়াবে বার্ষিক ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি লিটারে। এর আগে ২০১৪ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৪০ হাজার ৬০০ কোটি লিটারে, যা বিশ্বব্যাপী এক বছরে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মোট কেনাবেচা হওয়া পরিমাণের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বিশ্বব্যাপী ডেইরি পণ্যের ব্যাপক বাজার সম্প্রসারণের কারণ হিসেবে বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এশিয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সম্প্রসারণ এবং বিশ্ববাজারে ইরানের প্রত্যাবর্তনের কথা জানিয়েছে ফন্টেরা।
অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডেইরি পণ্যের আমদানি-রফতানি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার ১০০ কোটি লিটারে। ২০১৪ সালে এ পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬০০ কোটি লিটার।
বাজারের বর্তমান মন্দা পরিস্থিতিতে খামারিদের যথোপযুক্ত ফার্মগেট প্রাইস পরিশোধ করা ডেইরি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ফন্টেরা। এর পরও নিজস্ব ছয় মাস পর পর (এপ্রিল ও অক্টোবর) সমবায় লভ্যাংশ পরিশোধের নীতিতে অটল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

0 comments:

Post a Comment